জুতা পায়ে জানাজা পড়া জায়েজ কি? | ইসলামিক দৃষ্টিতে সঠিক নিয়ম | জানাজার সুন্নত আলোচনা
জানাজা মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন— জুতা পায়ে জানাজা পড়া কি জায়েজ?
এই ভিডিওতে আমরা কুরআন-হাদীস ও ওলামায়ে কেরামের মতামতের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
✅ ভিডিওতে যা থাকছে:
👉 জুতা পরে জানাজা পড়া হালাল নাকি হারাম
👉 রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল
👉 কোন শর্তে জুতা পরা যাবে
👉 সাধারণ ভুল ধারণার সংশোধন
👉 সঠিক সুন্নত অনুসরণ করার উপায়
🕌 ইসলাম জানুন, সুন্নাহ অনুসরণ করুন
👍 ভিডিওটি উপকারী মনে হলে Like, Comment & Share করুন
✅ আরও ইসলামিক ভিডিওর জন্য চ্যানেলটি Subscribe করুন
মহান আল্লাহর স্মরণ নামাজ, ‘আমার (আল্লাহর) স্মরণের জন্য তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৮)। তাঁর দরবারে আলীশানে উপস্থিতি হতে হবে সর্বোচ্চ বিনয়ে ও পবিত্রতার সঙ্গে। মহান আল্লাহর সঙ্গে মূসার (আ.) সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে— ‘…উপত্যকার ডান পাশে পবিত্র ভূমিতে… বলা হলো, ‘হে মূসা, নিশ্চয় আমিই আল্লাহ, সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক’। (সুরা কাসাস, আয়াত: ৩০) সুরা বাইয়্যিনার ০৫, জুমার ০২, ১১ নম্বর আয়াতসহ অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে একনিষ্ঠচিত্তে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
নামাজের অন্যতম ফরজ— শরীর, কাপড়, নামাজের স্থান পবিত্র হওয়া। তুর পাহাড়ে মূসার (আ.) সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে, পবিত্র স্থানে জুতা খোলার নির্দেশ— ‘নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতিপালক; সুতরাং তোমার জুতা জোড়া খুলে ফেলো, নিশ্চয় তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছো।’ (সুরা ত্বাহা, আয়াত: ১২)
আমরা প্রতিনিয়ত জীবন নদীর খেয়ায় করছি মৃত্যুর আহ্বান। মহান আল্লাহর নির্দেশ— ‘ওলা তামুতুন্না ইল্লা ওআ আনতুম মুসলিমুন…’ অর্থাৎ, ‘প্রকৃত মুসলমান না হয়ে মরো না’। অথচ, মরণ আমাদের হাতে নয়; জীবন-মৃত্যুর মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মানুষের মৃত্যুর পর জীবিত মানুষদের করণীয় থাকে, দ্রুত জানাজার ব্যবস্থা করা; করাও হয় তা-ই। জীবন কতই না ক্ষণিকের। সব ফরজ নামাজের সূচনায় আজান-ইকামত হয়, জানাজার নামাজ ‘ফরজ’— আর আমাদের এ নামাজের আজান-ইকামত হয়ে গেছে আতুর ঘরে জন্মের সূচনায় কানে কানে…। এখন শুধু last farewell-এর অপেক্ষায় ইমাম-মুসল্লিবৃন্দ! কবির ভাষায়
— ‘শত কাফনের শত কবরের অঙ্ক হূদয়ে আঁকি, গণিয়া গণিয়া ভুল করে গণি সারাদিন রাত জাগি। এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে, গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে…’ (কবর: জসিমউদ্দিন) ধর্মতাত্ত্বিকগণ বলেন, নামাজের স্থানের পবিত্রতা জানাজারও শর্ত।
জুতা পায়েও জানাজা পড়া যাবে যদি— জুতা পবিত্র হয়, মাটি পবিত্র হয়, জুতার উপরের অংশ পবিত্র হয়, জুতা খুলে তার উপর দাঁড়িয়ে। স্থান পবিত্র হলে জুতা খুলে দাঁড়ানো। দাঁড়ানোর স্থান অথবা জুতার নিচে অপবিত্র হওয়ার আশঙ্কা থাকলে জুতা খুলে তার উপর দাঁড়িয়েও নামাজ হবে।
জুতার নিচের অংশ যেহেতু অপবিত্র হওয়ার আশঙ্কাই বেশি, তাই মসজিদের বাইরে জানাজায় জুতা পায়ে নামাজ পড়া উচিত নয়। (বাহরুর রায়েক; ফাতাওয়া হিন্দিয়া) বুখারি, মুসলিম, মিশকাত ইত্যাদি গ্রন্থে আছে— পবিত্র জুতা পায়ে দিয়ে জানাজা আদায় করা এবং কবরে মাটি দেওয়া ও কবরস্থানে যাওয়া যাবে। প্রিয়নবী (সা.) জুতা পায়ে সালাত আদায় করেছেন— এমন ঘটনাও আবু দাউদ, দারেমি, মিশকাত প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। জুতা খুলে ফেলার কথা বলা হয়েছে— এমন হাদিসের ব্যাখ্যা হলো, জুতাতে অপবিত্রতা লেগে ছিল বলেই জুতা খুলতে বলা হয়েছিল (আবু দাউদ)। অন্যদিকে, রাসুল (সা.)-এর যুগে মসজিদ ও নামাজের স্থানগুলো ছিল কাঁচা ও নুড়ি পাথরের, আর মরুর উত্তাপে খালি পায়ে নামাজ কষ্টকর ছিল। সাধারণভাবে বিনয় ও পরিচ্ছন্নতার জন্য জুতা খোলাটাই উত্তম— হোক তা মসজিদে বা বাইরে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— ‘যখন তোমাদের কেউ (মসজিদে) নামাজ আদায় করতে এসে নিজ জুতা জোড়া পা থেকে খুলে ফেলে, তখন সে যেন তা দিয়ে কাউকে কষ্ট না দেয়। সে যেন জুতা জোড়া নিজের দু’পায়ের মাঝখানে রাখে…’ (আবু দাউদ) অন্য বর্ণনায় রয়েছে— ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর জুতা বাম পাশে রেখে নামাজ আদায় করেছিলেন।’
বস্তুত, সবকিছু ঠিক থাকলে জুতা পায়ে বা জুতার ওপর দাঁড়িয়ে জানাজার নামাজ হয়ে যাবে। টাইলস মোড়ানো, কার্পেট বিছানো স্থানে জুতা পায়ে সাধারণত কেউ যায় না— হোক তা মসজিদ অথবা বাড়ি। মাটির মানুষ মাটিতে দাঁড়িয়ে জানাজা আদায় করাই স্বাভাবিক। বিনয় ও পবিত্রতা হলো উদ্দেশ্য। মানুষের জীবন ও মৃত্যুর সবকিছুই মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সৃষ্টির মূল উপাদান মাটি—
মিনহা খালাকনাকুম ওয়া ফি-হা নুঈদুকুম, ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা। ‘আমি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি, আর মাটিতেই তোমাদের ফিরিয়ে আনবো, এবং পুনরায় তোমাদের মাটি থেকেই বের করবো।’ (সুরা ত্বাহা, আয়াত: ৫৫) বহু বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বিল্ডিং মসজিদে ‘মেহরাবে’র কাছে একটি লেখা টানানো দেখেছিলাম। যার ভাবখানা আজো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে— ‘
আপনার লাশ সামনে রেখে অন্যরা নামাজ পড়ার আগে আপনার নামাজ পড়ে নিন’।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আমার (আল্লাহর) স্মরণের জন্য তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো।”
— সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৮
ইবাদত মানে কেবল নামাজের রুকু-সিজদা নয়, বরং আল্লাহর দরবারে পূর্ণ বিনয়, ভক্তি ও পবিত্র হৃদয় নিয়ে উপস্থিত হওয়া। তাই ইবাদত সবসময় হতে হবে আদব, সম্মান ও খুশু-খুজুর সঙ্গে।
মূসা (আ.) ও আল্লাহর সঙ্গে পবিত্র আলাপন
আল্লাহ পাক বলেন—
“…উপত্যকার ডান পাশে পবিত্র ভূমিতে ডেকে বলা হলো, ‘হে মূসা! নিশ্চয় আমিই আল্লাহ, সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক।”
— সুরা কাসাস, আয়াত ৩০
এবং একই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে—
“আমি তোমার প্রতিপালক; সুতরাং তোমার জুতা খুলে ফেলো, তুমি পবিত্র তুওয়া উপত্যকায় রয়েছো।”
— সুরা ত্বাহা, আয়াত ১২
এখান থেকেই আলেমগণ বুঝেছেন—
পবিত্র স্থানে দাঁড়ানোর সময় বিনয়, সম্মান ও পরিচ্ছন্নতা জরুরি।
ইবাদতে একনিষ্ঠতার নির্দেশ
সুরা বাইয়্যিনা (আয়াত ৫), সুরা জুমা (আয়াত ২ ও ১১) এবং বহু আয়াত ও সহীহ হাদিসে আল্লাহ একনিষ্ঠচিত্তে ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
নামাজের তিনটি ফরজ শর্ত:
✅ শরীর পবিত্র হওয়া
✅ কাপড় পবিত্র হওয়া
✅ স্থান পবিত্র হওয়া
ইবাদতের জন্য বাহ্যিক ও অন্তরের উভয় পবিত্রতা অপরিহার্য।
জীবন ক্ষণিকের, জানাজা ফরজ
আল্লাহ বলেন:
“প্রকৃত মুসলিম না হয়ে মরো না।” — (আলে ইমরান: ১০২)
আমাদের হাতে মৃত্যু নেই, তাই জীবিত অবস্থায়ই নিজের আমল শুদ্ধ করা প্রয়োজন।
সব নামাজে আজান-ইকামত হয়, কিন্তু জানাজার নামাজের আজান-ইকামত জন্মের সময়ই হয়ে গেছে—কানে আজান ও ইকামত পড়ে দেওয়া হয়।
অতএব, মৃত্যুর পর শুধু “শেষ বিদায়” বাকি!
বাংলার কৃষক কবির হৃদয়বিদারক ভাষা—
“শত কাফনের শত কবরের অঙ্ক হূদয়ে আঁকি…
গাড়িয়া দিয়াছি কত সোনামুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে…”
— জসিমউদ্দিন (কবর)
প্রশ্ন: জুতা পায়ে জানাজা পড়া যাবে কি?
✅ যাবে যদি শর্ত পূরণ হয়:
1️⃣ জুতা পবিত্র হয়
2️⃣ মাটি বা স্থান পবিত্র হয়
3️⃣ জুতার উপর দাঁড়িয়ে পড়া হয়
4️⃣ জুতায় নাপাক থাকার সম্ভাবনা না থাকে
✅ জুতা খুলে তার ওপর দাঁড়িয়েও নামাজ আদায় করা বৈধ।
❌ তবে সাধারণভাবে উত্তম কী?
মসজিদের বাইরে খোলা স্থানে জুতার নিচে অপবিত্রতা লেগে থাকা খুব স্বাভাবিক।
তাই জুতা পায়ে জানাজা না পড়াই উত্তম ও বেশি সতর্কতার পথ।
— ফিকহ গ্রন্থ: বাহরুর রায়েক, ফাতাওয়া হিন্দিয়া
হাদিসের প্রমাণসমূহ:
📌 সহীহ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত-এ প্রমাণ আছে—
- পবিত্র জুতা পায়ে জানাজা আদায় করা যায়
- কবরস্থানে যাওয়া ও মাটি দেওয়া যায়
📌 প্রিয়নবি ﷺ জুতা পায়ে সালাত আদায় করেছেন
— (আবু দাউদ, দারেমি, মিশকাত)
📌 আবার এক হাদিসে বলা হয়েছে জুতা খুলতে, কারণ…
জুতাতে নাপাক লেগেছিল, তাই খুলতে বলা হয়। — (আবু দাউদ)
তৎকালীন সময় বনাম বর্তমান বাস্তবতা
✅ রাসুল ﷺ-এর যুগে:
- মসজিদ ছিল কাঁচা মাটি ও নুড়িপাথরের
- মরুভূমির উত্তাপে খালি পায়ে নামাজ কষ্টকর ছিল
✅ আজকের যুগে:
- মসজিদে টাইলস / কার্পেট
- ঘরেও পবিত্র কাপড় বিছানো হয়
⇒ তাই জুতা পায়ে যাওয়া স্বাভাবিক নয়।
সুন্নত ও আদব
ইবাদতের আদব হলো—বিনয়, নম্রতা ও পরিচ্ছন্নতা।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত—
“জুতা খুললে কারও কষ্ট না হয়; দু’পায়ের মাঝখানে রাখো।” — (আবু দাউদ)
আরেক বর্ণনায়—
“রাসুল ﷺ মক্কা বিজয়ের দিন জুতা বাম পাশে রেখে নামাজ পড়েন।”
চূড়ান্ত হুকুম (ফয়সলাঃ)
✅ শর্ত পূরণ হলে জুতা পায়ে জানাজা হয়ে যাবে
✅ জুতা খুলে তার উপর দাঁড়ালেও হবে
✅ পবিত্র স্থানে জুতা খোলা উত্তম ও সুন্নতসঙ্গত
মাটির সঙ্গে মানুষের সম্পূর্ণ সম্পর্ক
আল্লাহ বলেন—
“আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, মাটিতেই ফিরিয়ে দেবো এবং আবার মাটি থেকেই বের করবো।”
— সুরা ত্বাহা, আয়াত ৫৫
জন্ম → জীবন → মৃত্যু → কবর → পুনরুত্থান—সবই মাটির সঙ্গে সম্পর্কিত।
একটি গভীর স্মরণীয় উক্তি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বিল্ডিং মসজিদের মেহরাবে লেখা ছিল—
👉 “আপনার লাশ সামনে রেখে অন্যরা নামাজ পড়ার আগে আপনার নামাজ পড়ে নিন।”
এটি আমাদের সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয়—
এখনই নিজের ইবাদত ঠিক করো, কারণ কাল হয়তো জানাজার সারিতে তুমি থাকবে।
Islamic Cartoon Bangla, ইসলামিক কার্টুন বাংলা, শিশুদের ইসলামিক কার্টুন, Bangla Islamic Story, Islamic Kids Video, Halal Cartoon Bangla, Cartoon Islamic Bangla, ইসলামিক গল্প, Kids Cartoon Islamic, Quran Story Bangla, Prophet Story Bangla, ইসলামিক শিক্ষা কার্টুন, Bangla Moral Story, Islamic Animation Bangla
+ There are no comments
Add yours