কাউকে কালো বলে অবজ্ঞা করা ইসলামে কীভাবে দেখা হয়? | Islamic Reminder

Estimated read time 1 min read

মানবজাতি আল্লাহর সৃষ্ট। কারো রঙ, জাত বা বংশগৌরবের ভিত্তিতে কাউকে ছোট করা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। কেবল তাকওয়া ও আমলই মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ করে।
এই ভিডিওতে আমরা জানবো—

  • কাউকে কালো বলে অবজ্ঞা করার গুরুতর পাপ
  • রাসুলুল্লাহ ﷺ এর শিক্ষা
  • ইসলাম মানুষের সমতা ও ভ্রাতৃত্ব নিয়ে কী বলেছে

👉 আল্লাহ আমাদের অন্তরকে পরিষ্কার রাখুন এবং সব ধরনের বর্ণবাদ থেকে রক্ষা করুন।

ধনী-গরিব, সাদা-কালো সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। মহান আল্লাহর বান্দা। মহান আল্লাহ গোটা পৃথিবীকে বৈচিত্রময় করে সাজিয়েছেন। তার সৃষ্টিতে লুকিয়ে আছে অফুরন্ত রহস্য। সাদা কিংবা কালো বর্ণের হওয়ায় কারো মর্যাদায় তারতম্য হয় না। শুধু মাত্র গায়ের রঙের ভিত্তিতে কেউ আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে না। কিংবা ইসলামের দৃষ্টিতেও কাউকে গায়ের রঙের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ ভাবার সুযোগ নেই। ইসলামে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো, তাকওয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)

তাইতো বিদায় হজের ভাষনে মহানবী (সা.) বলেছেন, হে লোক সকল! শোনো, তোমাদের প্রতিপালক এক, তোমাদের পিতা এক। শোনো, আরবির উপর অনারবীর এবং অনারবীর উপর আরবির, কৃষ্ণকায়ের উপর শ্বেতকায়ের এবং শ্বেতকায়ের উপর কৃষ্ণকায়ের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা আছে তো কেবল ‘তাকওয়ার’ কারণেই। (শুআবুল ঈমান)

কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাও মানুষের সঙ্গে বর্ণ বৈষম্য করে বসি। গায়ের রঙের কারণে অন্যকে অবজ্ঞা করে ফেলি, যা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় অপরাধ হলেও আমরা একে কোনো অপরাধই মনে করি না। তাইতো মাঝে মাঝেই হাসি-ঠাট্টার ছলে নিজেদের পরিচিত মহলের লোকদের কালো বলে তিরস্কার করে বসি, যা একজন মুমিনের জন্য কোনো ভাবেই সমীচীন নয়। কেননা আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এ ধরনের কাজ পছন্দ করতেন না। বরং তিনি এসব কাজকে জাহিলি স্বভাব আখ্যা দিয়েছেন। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, মা‘রূর (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাবাজা নামক স্থানে আবু জার (রা.)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তার পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তার ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, আবু জার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাআলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে। (বুখারি, হাদিস : ৩০)

হাদিস ব্যাখ্যাকারদের মতে, এখানে আবু জার (রা.) মূলত কোনো সাহাবির মা কালো হওয়ায় কালো নারীর সন্তান বলে ফেলেছিলেন, যা মহানবী (সা.) পছন্দ করেননি।

এখানেই শেষ নয়। অনেকে তাদের সদ্য ভূমিষ্ট সন্তানের গায়ের রঙ কালো হলে স্ত্রীকে সন্দেহ করতে শুরু করে। আত্মীয়-স্বজনেরাও সামনে পেছনে হাসাহাসি করে, এটাও অনুচিত। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমার স্ত্রী একটি কালো সন্তান জন্ম দিয়েছে। আর আমি তাকে (আমার সন্তান হিসাবে) অস্বীকার করছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার কি উট আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলোর কী রঙ? সে বলল, লাল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলোর মাঝে সাদা কালো মিশ্রিত রঙের কোনো উট আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ, সাদা কালো মেশানো রঙের অনেকগুলো আছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন এ রং কিভাবে এল বলে তুমি মনে কর? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! বংশ সূত্রের প্রভাবে এমন হয়েছে। তিনি বলেন, সম্ভবত তোমার সন্তানও বংশ সূত্রের প্রভাবে (পূর্বপুরুষের কেউ কালো ছিল বলে) এমন হয়েছে। এবং তিনি এ সন্তানটিকে অস্বীকার করার অনুমতি লোকটিকে দিলেন না। (বুখারি, হাদিস : ৭৩১৪)

অতএব, প্রতিটি মুমিনের উচিত, বর্ণ বৈষম্যের মতো জাহিলি স্বভাব থেকে নিজেদের বিরত রাখা। তাকওয়া অবলম্বনের চেষ্টা করা। মানুষকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা।

কাউকে কালো বলে অবজ্ঞা করা ইসলামে

ভূমিকা

মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন:
“হে মানুষ! আমরা আপনাদেরকে এক পুরুষ ও এক স্ত্রী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং আপনাদেরকে বিভিন্ন জাত ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মর্যাদা তাকওয়ার উপর নির্ভর করে।”
(সূরা হুজুরাত: ১৩)

এ থেকে বোঝা যায়, মানুষের মর্যাদা তার রঙ, জাত, বংশ বা সামাজিক অবস্থার উপর নির্ভর করে না, বরং তাকওয়া ও নেক আমলের উপর নির্ভর করে। কিন্তু কিছু লোক কেবল রঙের ভিত্তিতে কাউকে অবজ্ঞা করে, যা ইসলামে কঠোরভাবে বারণ।


কালো বলে কাউকে অবজ্ঞা করার গুরুতরতা

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যে ব্যক্তি অন্যকে তার রঙের কারণে ছোট করে দেখবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি রোষ প্রকাশ করবেন।”
(সহিহ মুসলিম)

মানুষের রঙ বা জাতের ভিত্তিতে অবজ্ঞা করা এক ধরনের শিরক নয়, তবে এটি সামাজিক অন্যায় এবং আল্লাহর নৈকট্যকে দূরে ঠেলে দেয়। এটি মানবতার নৈতিক স্তম্ভ নষ্ট করে এবং সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে।


ইসলামিক শিক্ষা

১. সমতার শিক্ষা – ইসলামে সকল মানুষ সমান। মানবজাতির মধ্যে বৈষম্য কেবল তাকওয়া এবং নেক আমলের ভিত্তিতে।
২. ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য – মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রঙ বা জাতের ভিত্তিতে কোনও বৈষম্য করার অনুমতি নেই।
৩. সদাচরণ ও নৈতিকতা – কাউকে অবজ্ঞা না করা মানবিক মূল্যবোধ ও ইসলামের নৈতিক শিক্ষার অংশ।
৪. আল্লাহর নৈকট্য – আল্লাহর কাছে মানুষের মর্যাদা তার নৈতিকতা, ধৈর্য ও ঈমানের ওপর নির্ভর করে।


আমাদের জন্য শিক্ষা

  • কাউকে কালো, হোয়াইট বা অন্য কোনো রঙের কারণে ছোট করে দেখা ঠিক নয়।
  • শিশুকাল থেকেই শিশুদের মধ্যে সমতার শিক্ষা দেওয়া উচিত।
  • সমাজে সংহতি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে সকলকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।
  • তাকওয়া ও নেক আমলই মানুষের আসল পরিচয়।

উপসংহার

ইসলাম সব মানুষের মর্যাদা রঙ, জাত বা সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে নির্ধারণ করে না। কাউকে কালো বলে অবজ্ঞা করা এক ধরনের পাপ এবং এটি সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর নৈকট্য ও নৈতিকতার ভিত্তিতে মানুষকে মূল্যায়ন করা, সকলের সঙ্গে সমান আচরণ করা এবং সমাজে সংহতি বজায় রাখা।

azadservice https://www.azadservice.com

WhatsApp : wa.me/8801933307999
Email: dropshippingbuisness2000@gmail.com
Call : +8801933307999
Youtube : https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours