অমুসলিমদের কলমে মহানবী (সা.)-এর মহিমা

Estimated read time 1 min read

মানব ইতিহাসের পাতা জুড়ে এমন কিছু মহান মানুষ আছেন, যাদের আলো কেবল তাঁদের জাতি বা সময়কে আলোকিত করেনি; বরং তাঁরা হয়েছেন সর্বকালের, সর্বমানবের প্রেরণার দীপশিখা। তাঁদের মহত্ত্বের গৌরব মুছে যায়নি যুগের পর যুগের ধুলায়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, যাঁর আলো আজও মানবসভ্যতাকে আলোকিত করে চলেছে।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো—শুধু মুসলিমরা নন, বরং পৃথিবীর বহু অমুসলিম চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ তাঁর চরিত্র, নীতি ও প্রভাবের সামনে মাথা নত করেছেন। তাঁদের কলমে নবীজির মহিমা ফুটে উঠেছে এমনভাবে, যা প্রমাণ করে—তিনি সত্যিই সমগ্র মানবতার নবী, অমর আলো ও চিরন্তন ত্রাণকর্তা। চলুন শুরুতেই দেখি আমাতের সবার প্রিয় কবি আল-মাহমুদ মহানবী (সা.)-কে নিয়ে নিজ অনুভব অনুভুতি কোন ভাষায় প্রকাশ করেছেন-

গভীর আঁধার কেটে ভেসে ওঠে আলোর গোলক
সমস্ত পৃথিবী যেন গায়ে মাখে
জ্যোতির পরাগ, তাঁর পদপ্রান্তে লেগে
নড়ে ওঠে কালের দোলক
বিশ্বাসে নরম হয় আমাদের বিশাল ভূভাগ…

পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে পথহারা মানুষকে সঠিক পথের নির্দেশনার জন্য যত নবী-রাসুল প্রেরিত হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই নির্দিষ্ট এলাকা বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনোনীত হয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন। একমাত্র মুহাম্মদ (সা.) এমন একজন প্রেরিত রাসুল; যিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র ভূপৃষ্ঠে আগত মানুষের হিদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছেন।

মহানবী (সা.)-এর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সততা, আন্তরিকতা আর আদর্শ দেখে যুগে যুগে বহু মনীষী অভিভূত হয়েছেন।

নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে অভ্যস্ত কারো পক্ষে তাঁর অতুল ব্যক্তিত্বের অনন্য প্রভাব, মহোত্তম মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠ গুণাবলির কথা স্বীকার না করার কোনো উপায় নেই। কারণ, মানব সভ্যতার সবচেয়ে সমৃদ্ধ পর্যায়গুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা.)-এর অতুলনীয় মহত্ত্ব ও গুণের ছাপ স্পষ্ট।

মহানবী (সা.)-এর আদর্শ সম্পর্কে অমুসলিম পণ্ডিতদের কিছু মূল্যায়ন— Michael H. Hart তাঁর লিখিত বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ The 100 : A Ranking of the Most Influential Persons In History-তে লিখেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেওয়াটা অনেক পাঠককে আশ্চর্যান্বিত করতে পারে এবং অন্যদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেক্যুলার এবং ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন।

সম্ভবত ইসলামের ওপর মুহাম্মদের তুলনামূলক প্রভাব খ্রিস্টান ধর্মের ওপর যিশু ও সেইন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের চেয়েও বেশি। আমি মনে করি, ধর্মীয় ও সেক্যুলার উভয় ক্ষেত্রে প্রভাবের এই বিরল সমন্বয় যোগ্য ব্যক্তি হিসেবেই মুহাম্মদকে মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত করেছে।’

আমেরিকার সর্বপ্রথম ‘ম্যান অব লেটার’ এবং ‘ফাদার অব আমেরিকান লিটারেচার’ নামে পরিচিত বিখ্যাত লেখক Washington Irving তাঁর ঐতিহাসিক গ্রন্থ Muhammad-এর ২০ পৃষ্ঠায় ঐতিহাসিক আবুল ফিদার সূত্রে লিখেছেন, `একজন মানুষের পরিপূর্ণ সৎ ও পুণ্যবান হতে যতগুলো গুণে গুণান্বিত হতে হয় মহান প্রভু তাঁর মাঝে এর সবকটি গুণের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। তিনি এতটাই বিশুদ্ধ ও নির্মল প্রকৃতির অধিকারী ছিলেন যে স্বাভাবিকভাবে তিনি সবার কাছে ‘আল-আমিন’ নামে পরিচিত ছিলেন। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস যা বিচারের ক্ষেত্রে তাঁর মাঝে স্থিতি লাভ করেছিল আর তাঁর নম্রতা তাঁকে বরাবরই তর্ক-বিতর্ক সালিসির ক্ষেত্রে বিচারক ও মীমাংসাকারীর আসনে সমাসীন করেছিল।’

মি. ইরভিং তাঁর আলোচ্য গ্রন্থের ১৯২ ও ১৯৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক গুণাবলি ছিল নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর ও অতিমানবীয়। তাঁর ছিল দ্রুত উপলব্ধি করার সক্ষমতা, তেজস্বী স্মৃতিশক্তি, এক জীবন্ত ও প্রাণবন্ত কল্পনাশক্তি আর সৃজনশীল জেনিয়াস…।’ এরপর ১৯৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘সামরিক বিজয়গুলো কখনোই তাঁর মনে কোনো গর্ব কিংবা দম্ভের জন্ম দেয়নি। তিনি বাস্তবে নিজের স্বার্থে এ অভিযানগুলো করতেন না।

চরম দুঃখ আর দারিদ্র্যের মাঝে তাঁর চরিত্রে যেমন সারল্যের প্রলেপ স্পষ্ট অনুভূত হতো, তেমনি যখন তিনি বিজয়ের সিঁড়ির সর্বোচ্চ সোপানে দাঁড়িয়েছিলেন; তখনো তাঁর চরিত্র ছিল এক ও অভিন্ন…।’

বহু গ্রন্থের প্রণেতা Mr James A. michener ‘দ্য রিডার্স ডাইজেস্ট’ পত্রিকার জুন ১৯৫৫ সংখ্যার ৭৯ পৃষ্ঠায় Islam the misunderstood Religion নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ইসলাম যেভাবে অতি দ্রুতগতিতে গোটা বিশ্বে বিস্তৃতি লাভ করেছিল, সেভাবে অন্য কোনো ধর্ম বিস্তৃতি লাভ করতে পারেনি। মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই ইসলাম আরবের একটি বৃহত্তম অংশে কর্তৃত্ব লাভ করেছিল। পরবর্তী সময়ে অতি দ্রুতই তা সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর, আধুনিক রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ভূখণ্ডগুলোসহ উত্তর আফ্রিকার মধ্য দিয়ে স্পেনের প্রাচীর পর্যন্ত বিজয়াভিযান চালিয়েছিল। এর সবই সম্ভব হয়েছিল মুহাম্মদ (সা.)-এর সর্বোত্তম স্বভাব ও অতিমানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে।’

আধুনিক ভারতের জনক Mahatma Gandhi বলেন, ‘আমি জীবনগুলোর মধ্যে সেরা একজনের জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম, যিনি আজ কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান নিয়ে আছেন। যেকোনো সময়ের চেয়ে আমি বেশি নিশ্চিত যে ইসলাম তরবারির মাধ্যমে সেই সব দিনগুলোতে মানুষের জীবনধারণ পদ্ধতিতে স্থান করে নেয়নি। ইসলামের প্রসারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজেকে মূল্যহীন প্রতিভাত করা, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করা, তাঁর অটল সাহস। এ সবই মুসলমানদের সকল বাধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।’

পরিশেষে বলব, এমন নবীর উম্মত হতে পেরে আমরা প্রত্যেকেই ধন্য। কারণ এই নবীর উম্মত হওয়ার জন্য যুগে যুগে বহু নবী-রাসুল পর্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। মহান আল্লাহ আমাদের মহানবী (সা.)-এর দেখানো পথ ও মতে জীবন চালানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

মানবতার চূড়ান্ত ত্রাণকর্তা মহানবী মুহাম্মদ (সা.)


মানবতার চিরন্তন আলোকবর্তিকা

মানব ইতিহাসের পাতা জুড়ে এমন কিছু মহান মানুষ আছেন, যাদের আলো কেবল তাঁদের জাতি বা সময়কে আলোকিত করেনি; বরং তাঁরা হয়েছেন সর্বকালের, সর্বমানবের প্রেরণার দীপশিখা। তাঁদের মহত্ত্বের গৌরব মুছে যায়নি যুগের পর যুগের ধুলায়।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, যাঁর আলো আজও মানবসভ্যতাকে আলোকিত করে চলেছে।


বিশ্বজনীন নবী ﷺ

পৃথিবীর ইতিহাসে যুগে যুগে পথহারা মানুষকে সঠিক পথের নির্দেশনার জন্য যত নবী-রাসুল প্রেরিত হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই নির্দিষ্ট এলাকা বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। একমাত্র মুহাম্মদ (সা.) এমন একজন প্রেরিত রাসুল; যিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র ভূপৃষ্ঠে আগত মানুষের হিদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছেন।

আল্লাহ তাঁকে সম্বোধন করে বলেছেন—

وَمَآ أَرْسَلْنَـٰكَ إِلَّا رَحْمَةًۭ لِّلْعَـٰلَمِينَ
“আমি তো আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।”
(সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)


অমুসলিম চিন্তাবিদদের চোখে মহানবী ﷺ

মাইকেল এইচ. হার্ট

বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ The 100: A Ranking of the Most Influential Persons In History-এ লিখেছেন—
“মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেওয়াটা আশ্চর্যের মনে হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় ও সেক্যুলার উভয় ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করেছেন।”


ওয়াশিংটন আরভিং

ঐতিহাসিক গ্রন্থ Muhammad-এ তিনি লিখেছেন—
“একজন মানুষের পরিপূর্ণ সৎ ও পুণ্যবান হতে যতগুলো গুণের প্রয়োজন, মহান প্রভু তাঁর মাঝে এর সবকটি গুণের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। তিনি এতটাই নির্মল প্রকৃতির ছিলেন যে সবাই তাঁকে ‘আল-আমিন’ নামে চিনত।”

তিনি আরও বলেন—
“সামরিক বিজয়গুলো কখনোই তাঁর মনে অহংকার আনেনি। দুঃখ-দারিদ্র্য বা বিজয়—সব অবস্থায় তাঁর চরিত্র একই রকম ছিল।”


জেমস এ. মিচেনার

Reader’s Digest (জুন ১৯৫৫) এ প্রকাশিত Islam: The Misunderstood Religion প্রবন্ধে লিখেছেন—
“ইসলাম যেভাবে দ্রুত বিস্তৃত হয়েছিল, অন্য কোনো ধর্ম তেমন বিস্তৃত হতে পারেনি। এর সবই সম্ভব হয়েছিল মুহাম্মদ (সা.)-এর স্বভাব, দৃষ্টিভঙ্গি ও অতিমানবিক নেতৃত্বগুণের কারণে।”


মহাত্মা গান্ধী

তিনি বলেন—
“আমি সেই ব্যক্তির জীবন জানতে চেয়েছিলাম, যিনি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান নিয়েছেন। ইসলামের বিস্তারের কারণ তরবারি নয়; বরং নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজেকে তুচ্ছ ভাবা, ভবিষ্যতের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি, অনুসারীদের জন্য আত্মত্যাগ এবং অটল সাহস।”


মানবতার চূড়ান্ত ত্রাণকর্তা

মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সততা, আন্তরিকতা আর আদর্শ দেখে যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী অভিভূত হয়েছেন। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তাঁর অনন্য ব্যক্তিত্বের প্রভাব অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

তিনি মানবজাতিকে শিখিয়েছেন—

  • ক্ষমতা মানে দায়িত্ব,
  • সম্পদ মানে আমানত,
  • শক্তি মানে দুর্বলকে রক্ষা করা।

আল্লামা ইকবাল যথার্থই বলেছেন—
“মুহাম্মদ (সা.)-এর দৃষ্টিতে মানবজাতি এক দেহের মতো; যেখানে ব্যথা লাগে, সেখানেই সমগ্র দেহ কেঁপে ওঠে।”


আমাদের করণীয় ও দোয়া

আমরা মহান সৌভাগ্যের অধিকারী যে, এমন এক নবীর উম্মত হতে পেরেছি, যিনি মানবতার প্রকৃত ত্রাণকর্তা। যুগে যুগে বহু নবী-রাসুলও এ মর্যাদা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন।

👉 পরিশেষে আমাদের প্রার্থনা—
আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরে নবীজির ভালোবাসা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর দেখানো পথে চলার তাওফিক দান করেন। আমিন।

azadservice https://www.azadservice.com

WhatsApp : wa.me/8801933307999
Email: dropshippingbuisness2000@gmail.com
Call : +8801933307999
Youtube : https://www.youtube.com/@DropshippingService?sub_confirmation=1

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours